টাঙ্গুয়ার হাওরে আধাকাপ রং চায়ের দাম ১০ টাকা, তারপরও কেন জনপ্রিয় 

টাঙ্গুয়ার হাওরে আধাকাপ রং চায়ের দাম ১০ টাকা, তারপরও কেন জনপ্রিয় 

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে আধাকাপ রং চায়ের দাম ১০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। আর সেই চায়ের কাপ মুখে নিয়ে হাজারো পর্যটক টাঙ্গুয়ার হাওরের পানিতে শরীর ডুবিয়ে মাথা বের করে ছবি উঠছেন। এবং সেই চা বিক্রি করে সংসার চলছে মতিন মিয়া(৩২) সাহানুর মিয়া (৪০) এর মত প্রায় ৫০ শতাধিক টাঙ্গুয়ার হাওরে থাকা অসহায় কর্মহীন মানুষদের।

টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি নির্দেশনা শেষে সারাদেশের মত খুলে দেওয়া হয়েছে সুনামগঞ্জের সকল পর্যটন কেন্দ্র। আর পর্যটন কেন্দ্র খুলের দেওয়ার প্রথমদিন ভোর থেকে হাজারো পর্যটক আসছেন টাঙ্গুয়ার হাওরে আর তাতেই ভাগ্য খুলেছে হাওরে থাকা কর্মহীন মানুষদের।

তারা ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের জন্য ছোট নৌকা করে, চা, বিস্কুট, পান, মুড়ি, সিগেরেট নিয়ে হাওরের চারপাশে ঘুরতে থাকেন, তবে বাজারের তুলনায় সেইগুলোতে তারা দিগুণ দামে বিক্রি করেন। আর পর্যটকরা সেই দামেই সেগুলো কিনে খান। তবে টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের জন্য এখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে রং চা, কারণ নৌকা টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারে বেধে তারা পানিতে নেমে গোসল করছেন, কেউবা রং ঢং করে নৌকা থেকে লাফিয়ে পানিতে পড়ছেন, এবং তাদের পাশে থাকা ছোট নৌকা থেকে বন্ধুুরা সবাই মিলে আধাকাপ রং চা ১০ টাকা দামে কিনে সেই চায়ে মুখ লাগিয়ে শরীর ডুবিয়ে মাথা বের করে ছবি উঠছেন। 
টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটক রিহান খান  বলেন, বন্ধুুরা সবাই মিলে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসছি, এখানে এসে প্রায় ঘন্টা খানেক হল হাওরের পানিতে শরীর ডুবিয়ে মাথা বের করে রং চা খাচ্ছি ঐ রকম চা খাওয়ায় যে আনন্দ হচ্ছে সেটা বলে বুজাতে পারব না।

টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটক তাজিল আহমেদ  বলেন, আমি কখনও রং চা খাইনি, বন্ধুুরা সবাই মিলে রং চা খেয়ে পানিতে শরীর ডুবিয়ে ছবি উঠছে, তাই ভাবলাম আমি উঠি কিন্তু টাঙ্গুয়ার হাওরের পানিতে শরীর ডুবিয়ে রং চা খাওয়ার যে মজা,তা বলে বুজাতে পারব না।

টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটক জামিল আহমেদ  বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসছি, দীর্ঘক্ষণ নৌকায় চড়ায় মাথায়,খুব ধরেছে সেই জন্য নৌকা থেকে নেমে চা খেলাম তবে এখানে চায়ের দাম হলেও এখানের রং চায়ের মত স্বাধ বাংলাদেশের আর কোথাও নেই।

টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটক মিলন আহমেদ  বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে এসে অনেক মজাও হইচই করছি, করোনায় আমাদের জীবন থেকে অনেকগুলো আনন্দময় দিন কেড়ে নিয়েছে, সারাক্ষণ মাস্ক লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতে হত কিন্তু আমার মনে হয় এখন দেশে আর কোন করোনা ভাইরাস বলতে কিছু নেই তাই ত মুক্ত বাতাসে মাস্ক না লাগিয়ে শান্তির নিশ্বাস নিচ্ছি।

টাঙ্গুয়ার হাওরে ছোট নৌকা নিয়ে চা বিক্রিতা মতিন মিয়া  বলেন, প্রায় দীর্ঘদিন টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকরা আসেনি, সেই জন্য পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটিয়েছি, কিন্তু গত দুই দিন ধরে হাজারো পর্যটক টাঙ্গুয়ার হাওরে আসছেন, আর আমরা ছোট নৌকা করে চা, বিস্কুট, পান, সিগেরেট, মুড়ি নিয়ে পর্যটকদের পাশে ঘুরতে থাকি, তবে হাওরে এখন সবচেয়ে বেশি রং চা পর্যটকরা খায়, আমরা আধাকাপ রং চা ১০ টাকা বিক্রি করি, আর সেই রং চা দেশীয় লেবুর পাতা দিয়ে তৈরী করি যা পর্যটকরা খেয়ে খুব তৃপ্তি পান, এবং আমরাও দৈনিক ৬শ থেকে ৭শ টাকার মত রোজগার করতে পারি।

টাঙ্গুয়ার হাওরে ছোট নৌকা নিয়ে চা বিক্রিতা সাহানুর মিয়া  বলেন, আমরা হাওর পাড়ের মানুষ, আমাদের খোজ খবর কেউ রাখেনা, পর্যটকরা টাঙ্গুয়ার হাওরে আসলে আমাদের পেটে ভাত পড়ে, বর্তমানে টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের মিলন মেলা চলছে, আমরা ছোট নৌকা করে প্রায় ৫০ টি নৌকা চা, বিস্কুট নিয়ে পর্যটকদের পাশে ঘুরছি, বর্তমানে আমরা পর্যটক আসায় দু বেলা শান্তি ছেলে মেয়ে নিয়ে দুটি ভাত খেতে পারছি।

তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো.রায়হান কবির  বলেন, পর্যটকরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাওরে ডুকে সেই জন্য আমরা মাঠে কাজ করছি, ইতিমধ্যে পুরো তাহিরপুর উপজেলায় মাইকিং করা হয়েছে। এবং যারা স্বাস্থ্য বিধি না মেনে হাওরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৪ জন পর্যটককে তিন হাজার একশত টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং আমরা পর্যটন কেন্দ্রের নৌকাঘাটে মাস্ক বিতরণ করেছি।